বাস্তব সংখ্যা ও অমূলদ সংখ্যা
আগের পর্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে মূলদ সংখ্যার ব্যাপারে| আমাদের অতি পরিচিত ব্যবহার্য সংখ্যাগুলিকে অন্যরকমভাবে অন্য নতুন পর্যায়ে আমরা চিনতে শিখেছি| এবার আলোচনা করা যাক এমনকিছু সংখ্যার ব্যাপারে, যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে অথচ, তার সম্বন্ধে ছাত্র-ছাত্রীদের স্পষ্ট ধারণা নেই গাণিতিক ভাষায় এর পরিচয় অমূলদ সংখ্যা |
একটি সরলরেখার উপর পূর্ণ সংখ্যাকে নির্দিষ্ট স্থানে বসানো হয় | একইভাবে পূর্ণ সংখ্যার বদলে মূলদ সংখ্যা দিল একটি সরলরেখার নির্দিষ্ট স্থান দেওয়া সম্ভব হয় | এরকম সরলরেখায় পরপর বসানো দুটি বিন্দুর মাঝখানে রেখাংশকে প্রত্যেক ক্ষেত্রেই সমান দুই ভাগে ভাগ করে খেলা যাক | এর ফলে সরলরেখা টির উপর যেসব নতুন বিন্দু পাওয়া যাবে, সেই সব মূলদ সংখ্যাকে জায়গা দেবে যাদের হর 2 | এবারে যেসব মূলদ সংখ্যার হর 3 তাদের চিহ্নিতকরণের জন্য পরপর বসানো দুটি বিন্দুর মাছের রেখাংশকে প্রতিটি ক্ষেত্রে সমান তিন ভাগে ভাগ করে ফেলতে হবে | এরপর এই দুটি সরলরেখা কে একে অপরের ওপর সমাপতিত করলে উভয়ের মূলবিন্দু মিলে যায় | এক্ষেত্রে খেয়াল করলে দেখা যাবে যে এইসব মূলদ সংখ্যাদের লব যেকোনো পূর্ণ সংখ্যা হতে পারে কিন্তু হর 2 অথবা 3 হবে |
অর্থাৎ, n হর বিশিষ্ট মূলদ সংখ্যা দের জায়গা করে দিতে হলে সরলরেখা তে পরপর দুটি বসানো বিন্দুর মাঝির রেখাংশকে প্রতিক্ষেত্রে n সংখ্যক সমান ভাগে ভাগ করে নিতে হবে | এর ফলে যেসব বিন্দু পাওয়া যাবে, তারা সেইসব ভগ্নাংশকে জায়গা করে দেবে যাদের হর n হয়| এখন কল্পনা করলে বোঝা যাবে এই কাজটা আমরা n এর প্রতিটি ধনাত্মক অখণ্ড মানের জন্য করে ফেলতে পারি | তাহলে এভাবে আমরা সরলরেখা টির উপর প্রত্যেকটি মূলদ সংখ্যার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা করে দিতে পারব | যেসব বিন্দুতেই মূলদ সংখ্যা দের বসানো গেল, সরলরেখাটির সেইসব বিন্দুকে আমরা বলি মূলদ বিন্দু,কারণ তারা মূলদ সংখ্যা কে জায়গা করে দেয় |
উপরের আলোচনায় যেভাবে সমস্ত মূলদ সংখ্যাকে সংখ্যা অক্ষের উপর জায়গা করে দেওয়া গেল তার থেকে মনে হতেই পারে যে এভাবে n এরমান ক্রমশ বাড়তে থাকলে যেসব নতুন নতুন বিন্দু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে, তারা ক্রমশ সংখ্যা অক্ষটি কে ভরিয়ে ফেলেছে|বস্তুত এভাবে ভাবলেই ধারণা হওয়াই স্বাভাবিক যে যদি n এর সব ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যা মানের জন্য এই কাজটা করে ফেলা যায়, তাহলে সংখ্যা অক্ষের ওপর আর কোন খালি জায়গা থাকবে না, অর্থাৎ মূলদ বিন্দু গুলি ঘেষাঘেষি করে এমন ভাবে সংখ্যা অক্ষকে ভুলিয়ে দেবে, সংখ্যা অক্ষের উপর বিন্দুমাত্র মূলদ বিন্দু ! গাণিতিক পরিভাষায় বলা যায় সংখ্যা অক্ষের উপর মূলদ বিন্দুগুলি নিবিড় ভাবে অবস্থান করে, অর্থাৎ সংখ্যাঅক্ষে যত ছোট রেখাংশ নেওয়া যাক না কেন, তার ওপর অন্তত একটি মূলদবিন্দু থাকবে | এই হিসেবে এ কথা ভাবা স্বাভাবিক, যে সব মূলদ সংখ্যা দেড় জায়গা করে দেবার পর সংখ্যাকে আর কোনো ফাঁক থাকে না |
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ফাঁক থাকে | সত্যি বলতে কি প্রচুর ফাঁক থাকে, হ্যাঁ ! সব মূলদ সংখ্যাকে জায়গা করে দেবার পরেও গোটা সংখ্যা অক্ষ জুড়ে সর্বত্রই প্রচুর ফাঁক থাকে | হোয়াটসঅ্যাপ সংখ্যা অক্ষের উপর এমন অনেক বিন্দু খুঁজে পাওয়া যায় যারা মূলদ বিন্দু হতে পারে না | এবং খুবই বিস্ময়কর ভাবে সংসদকে মূলদ বিন্দুর চেয়ে অনেক অনেক বেশি সংখ্যক বিন্দু আছে যারা মূলদ বিন্দু নয় |
এই সংখ্যাগুলি কে বলা হয় অমূলদ সংখ্যা | কোন প্রাচীন গ্রীক সভ্যতায় এই সংখ্যার ধারণা পাওয়া যায় একথা বলার প্রয়োজন এই যে এই ধরনের সংখ্যার ধারণা উন্নতি সেই যুগে আর ঘটেনি | বস্তুত এর গণিতের জগত থেকে একরকম হারিয়ে গিয়েছিল| ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ধাপে এই ধারনার পুনর বিকাশ ঘটে জার্মান গণিতজ্ঞ Cantor ও Dedekind ও অন্যান্যদের চিন্তায় এবং তারাই এই অমুলদ সংখ্যার তত্ত্বকে সম্পূর্ণভাবে সুদৃঢ় ও গাণিতিক ভিতের ওপর দাঁড় করান| জটিল তত্ত্বের নিয়মমাফিক বিশ্লেষণ এই পর্যায়ে সম্ভব নয়; তাই আমরা সেই পথে না গিয়ে অমূলদ সংখ্যার ধর্ম সম্বন্ধে দু-একটা কথা আলোচনা করব :
প্রথমেই বলা যাক অমূলদ সংখ্যার দশমিক ভগ্নাংশের চেহারা মূলদ সংখ্যার মত নয় | এক্ষেত্রে যে দশমিক ভগ্নাংশ পাওয়া যায় তা পৌনঃপুনিক নয় | অবাক করার কথা এই যে √2 এর মত অতি সাধারণ অমূলদ সংখ্যার নিখুঁত এবং সম্পূর্ণ মান দশমিক ভগ্নাংশে পাওয়া সম্ভব নয়; বস্তুত আমরা বিভিন্ন ব্যবহারিক প্রয়োগে √2= 1.414 ধরে নিই তা আসলে মানের কাছাকাছি কাজ চালানো গোছের একটি মূলদ সংখ্যার মান|অমূলদ সংখ্যার ক্ষেত্রে মূলদ সংখ্যার মতোই একথা সত্য যে দুটি অমূলদ সংখ্যার মধ্যে অসীম সংখ্যক অমুলদ সংখ্যা থাকে |
এবার আসা যাক বাস্তব সংখ্যাদের কথায় | আসলে এসমস্ত মূলদ এবং অমূলদ সংখ্যাকে একত্র করলে যে সংখ্যা তৈরী হয় তাকেই বাস্তব সংখ্যা তন্ত্র বলে | অন্যভাবে বলতে গেলে, একটি বাস্তব সংখ্যা হয় মূলদ অথবা অমুলদ হবে কিন্তু কখনই একসাথে দুটি হতে পারবে না | যেহেতু আমরা দেখেছি যে সমস্ত মূলদ সংখ্যা কেই সংখ্যা অক্ষে নির্দিষ্ট জায়গা করে দেওয়া যায়, এবং অমূলদ সংখ্যার ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায় | অতএব আমরা এখন বলতে পারি প্রতিটি বাস্তব সংখ্যার জন্যেই সংখ্যা অক্ষে নির্দিষ্ট জায়গা করে দেওয়া যায় | অন্যভাবে সংখ্যা অক্ষের প্রতিটি বিন্দুই নির্দিষ্ট বাস্তব সংখ্যাকে চিহ্নিত করে|গাণিতিক পরিভাষায় সমস্ত বাস্তব সংখ্যার সাথে একটি সরলরেখার উপর অবস্থিত সমস্ত বন্ধুদের মধ্যে একের সঙ্গে এক সম্বন্ধ আছে (one to one correspondence) |
এই ধরনের পরিভাষাকে বলে cantor-Dedekind axiom যার মূল কথা হলো,
সরলরেখার প্রতিটি বিন্দু নির্দিষ্ট বাস্তব সংখ্যাকে চিহ্নিত করে এবং অপর ক্ষেত্রে প্রতিটি বাস্তব সংখ্যার সরলরেখার উপর নির্দিষ্ট বিন্দু দ্বারা চিহ্নিত হয় |
মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা বিশেষত, গণিত বিষয়ে পাঠ্যসূচির বহির্গত বিষয়ে অধ্যয়ন করার সময় বেশি পায় না | অথচ, যদি কোন ক্রমে তাদের সংখ্যাতত্ত্ব সম্বন্ধে basic ধারনা না থাকে, তাহলে তারা সহজেই উপরোক্ত বর্ণনাটি হৃদয়ঙ্গম করতে পারে, এবং পূর্ববর্তী concept এর অভাব কাটিয়ে নতুনভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারে |
Homework Help from Expert Tutors
Upload your homework questions and get video and PDF solutions created by expert tutors. Delivery within 6- 24 Hrs.