
গণিতকে বিভিন্ন বিভিন্ন সংখ্যার পারস্পরিক আদান প্রদান এবং নিয়ম এর মাধ্যমে গঠিত সূত্র জালের দ্বারা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে| মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক গণিত এ একান্ত প্রয়োজনীয়, সংখ্যাতত্ত্বের বিষয়গুলির যে মূল বুনিয়াদ, মুলদ, অমুলদ, ও বাস্তব সংখ্যার ধারনা, তা বেশিরভাগ পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেই স্পষ্ট নেই বর্তমান পর্যায়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
কোনো অজানা প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষ বস্তুগত গণনার ধারণাকে বিমুর্ত রূপ দিয়ে তৈরি করেছিল স্বাভাবিক সংখ্যার ধারণা| সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে আরেকটি সমস্যা দেখা দিল মানুষের সামনে- কিভাবে মাপা যাবে কোন দৈর্ঘ্যকে? -এই সমস্যার সমাধানে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল একথা বুঝতে পারা, যে দৈর্ঘ্যের পরিমাপ করার সমস্যা কি আসলে বস্তুগত গণনার সমস্যার বদলে ফেলা যায়?বস্তুত মনে করা যাক, তোমার কাছে চক আছে, আর এর মাধ্যমে তুমি একটি টেবিলের দৈর্ঘ্য মাপতে চাও| এক্ষেত্রে চকের দৈর্ঘ্যটিকে কম দৈর্ঘ্য হিসেবে ব্যবহার করলে,টেবিলের দৈর্ঘ্য মাপার সমস্যাটি গিয়ে দাঁড়ায়- কতবার তোমার চোখ থেকে তুমি টেবিলের দৈর্ঘ্য বরাবর বসাতে পারছো, তার সংখ্যা গণনায়| ভাগ্যের অনুকূলে এমনটা হতেই পারে যে ঠিক দেখা গেল r সংখ্যক বার বসানোর পর টেবিলটি শেষ হয়ে গেল| অর্থাৎ টেবিলের দৈর্ঘ্য চকের দৈর্ঘ্যের ঠিক r গুন| কিন্তু যদি তা না হয়? যদি এমনটা হয় যে টেবিলের দৈর্ঘ্য চকের দৈর্ঘ্যের r গুণের থেকে বড় কিন্তু (r+1) গুনের থেকে ছোট? নিশ্চয়ই প্রাচীন সভ্যতার মানুষেরা এই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি পড়েছিল| গ্রীক সভ্যতার সেইসব অসামান্য প্রতিভাধর জ্যামিতিবিদদের কথা ভাবলে শ্রদ্ধায় আমাদের মাথা নত হয়, যারা সভ্যতার সেই ঊষাকালে বুঝতে পেরেছিলেন সেই সমস্যার সমাধান করতে গেলে স্বাভাবিক সংখ্যা দিয়ে তৈরি সংখ্যা তন্ত্রকে আরো বাড়াতে হবে, মেনে নিতে হবে নতুন ধরনের এক সংখ্যার ধারণা, যা আসবে একক দৈর্ঘ্যের বিভিন্ন সংখ্যক সমান বিভাজন থেকে এবং এই সূত্রেই গণিতে চালু হলো ভগ্নাংশের ধারণা| খেয়াল করে দেখলেই বুঝতে পারা যায় যখন এক ফুট লম্বা কোন দন্ড দিয়ে একটি বস্তুর দৈর্ঘ্য মাপতে গিয়ে দেখা যায় সেটি তিন ফুটের চেয়ে বড় অথচ চার ফুটের চেয়ে কম, তখন কি করনীয়? অবশ্যই একক দৈর্ঘ্যের ছোট করে নিয়ে সাধারণত 1 ফুটকে সমান 12 ভাগে ভাগ করে তার এক ভাগকে বলে 1 ইঞ্চি; আর এই নতুন একক এর মাধ্যমে মাপতে গিয়ে হয়তো দেখা গেল বস্তুটি ঠিক 41 ইঞ্চি লম্বা,অর্থাৎ এর দৈর্ঘ্য 3 ফুট 5 ইঞ্চি|
গ্রিক যুগের পরিভাষায় দুটি রেখাংশকে বলা হতো সুপরিমিত যদি একটি রেখাংশকে অপরটির সাহায্যে মাপা যায় অর্থাৎ কিনা তাদের মা-বাবার কোন একটি সাধারন একক আছে| ধরা যাক a দৈর্ঘ্যের একটি রেখাংশ কে b দৈর্ঘ্যের একটি রেখাংশ ঠিক r সংখ্যকবার বসানো যায়; অর্থাৎ, b=ra যদি তা না হয় তাহলে a দৈর্ঘ্যের রেখাংশকে সমান n সংখ্যক ভাগে ভাগ করা হলো|এর 11 ভাগের দৈর্ঘ্যকে a/n চিহ্ন দিয়ে বোঝানো যাক| এবার এমনকি হতেই পারে যে ক্ষুদ্রতম একক দৈর্ঘ্য অর্থাৎ, a/n ঠিক m সংখ্যক বার b দৈর্ঘ্যের রেখাংশকে গেল| এক্ষেত্রে লেখা হবে b = m×a / n বা, b = m/n × a, এক্ষেত্রে খেয়াল করলেই বোঝা যাবে, a ও b কে মাপার সাধারণ একক দৈর্ঘ্য হল a/n, কারণ a = n × a/n b= m × a/n; এবার যদি, a এর দৈর্ঘ্য কি একক দৈর্ঘ্য ভাবা যায়, তাহলে, b = m/n হবে| গোড়ায় এই ধরনের চিহ্ন কে বলা হত ভগ্নাংশ| বস্তুত এই ধরনের চিহ্ন দের সংখ্যার মর্যাদা দ্বিতীয় শতাব্দীর পর শতাব্দী কেটে গেছে, এখন আমরা মেনে নিয়েছিলাম সংখ্যা= স্বাভাবিক সংখ্যার মতোই গুরুত্বপূর্ণ নিজের অধিকারে এদের জায়গা করে দিতে হবে সংখ্যাতন্ত্রের মাধ্যমে| এদের গাণিতিক পরিভাষায় বলা হয় মূলদ সংখ্যা|
এবার খুব সহজেই যাচাই করে দেখা যেতে পারে, স্বাভাবিক সংখ্যার ক্ষেত্রে যোগ এবং গুণ প্রক্রিয়া ধর্মকে নিয়ন্ত্রণ করে যে পাঁচটি মূলসূত্র তারা এসব মূলদ সংখ্যার ক্ষেত্রে সমান ভাবে সত্য| তাই এদিক থেকে দেখলেও এদেরকে সংখ্যা বলে মেনে নিতে কোন আপত্তি হওয়ার কথা নয়|
মূলদ সংখ্যার ধারণা উদ্ভবের পেছনে বাস্তবিক সমস্যার কথা আমরা আলোচনা করেছি তাছাড়া গণিতের নিজের চাহিদার প্রয়োজনে মুরাদ সংখ্যা দরকার হয়ে পড়েছিল| নিশ্চয়ই বুঝতে পারা যায় যে এই ধরনের সংখ্যার ধারণা কে মেনে না নিলে স্বাভাবিক সংখ্যার মধ্যে ইচ্ছেমতো ভাগ প্রক্রিয়া চালু করা যেত না| একটি স্বাভাবিক সংখ্যা a কে আর একটি স্বাভাবিক সংখ্যা b দিয়ে ভাগ করা বলতে বোঝায় আর একটি স্বাভাবিক সংখ্যা c খুঁজে বার করা, যাতে, a=bc হয়| স্পষ্টতই সংঘাতে শুধুমাত্র স্বাভাবিক সংখ্যার জগতেই সীমাবদ্ধ রাখলে তা দিয়ে অনেক ক্ষেত্রে কাজ চলবে না| অর্থাৎ আমরা 2 কে 3 দিয়ে বা 5 কে 7 দিয়ে ভাগ করতে পারতাম না,কারণ এসব ক্ষেত্রে ভাগফল আর স্বাভাবিক সংখ্যা হবে না|
তাই এই প্রক্রিয়াকে আরো বেশি করে প্রেরকের সুবিধার জন্য ধীরে ধীরে মূলদ সংখ্যার ধারণা কে মেনে নেওয়া শুরু হয়েছিল|শুধু একটা কথা বিশেষভাবে মনে রাখা দরকার, শূন্য দিয়ে কোন সংখ্যাকে ভাগ করা যায় না|পরবর্তী কালের ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যার সঙ্গে - মূলদ সংখ্যা দেড় কেউ সংখ্যা তন্ত্র জায়গা দেওয়া হলো অনেকটা পূর্ণসংখ্যার মতই|
খেয়াল করলে দেখা যায় এর অর্থ মূলদ সংখ্যা পূর্ণ সংখ্যার ধারণা কে আরো generalize করে; কারণ যে কোন পূর্ণ সংখ্যা a কে মূলদ সংখ্যা a/1 বলে ভাবা যেতেই পারে|- মূলদ সংখ্যার ক্ষেত্রে চালু রীতি অনুসারে আমরা হরকে ধনাত্মক এবং লব কে ঋণাত্মক ধরে নিই|
এজাতীয় concept গুলি clear থাকলে, পাটিগণিত এবং রাশি বিজ্ঞান সংক্রান্ত বেশ কিছু সমস্যার সমাধান স্বতঃস্ফূর্তভাবে হয়ে যায়| আশা করা যায় ছাত্র-ছাত্রীরা, এই সুযোগের যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করতে পারবে|
Upload your homework questions and get video and PDF solutions created by expert tutors. Delivery within 6- 24 Hrs.