সংখ্যাতন্ত্র - CLEAR CONCEPT - Part - 1
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা কমবেশি সবাই বাস্তব সংখ্যা কথাটার সাথে পরিচিত| কিন্তু আমরা কখনোই হয়তো ভেবে দেখিনি এই বাস্তব সংখ্যা কোথা থেকে এলো অর্থাৎ কি দেখে চেনা যাবে একটি সংখ্যা বাস্তব কিনা? এবার বাস্তব সংখ্যার ইতিহাস সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোচনা করা যাক| প্রথমেই বলে ফেলি যে উপরের প্রশ্নগুলির তা তারা দেখতে যতটাই সহজ মনে হোক না কেন নিখুঁত গাণিতিক উত্তর দেওয়া এই পর্যায়ে সম্ভবই নয়| খানিকটা ঘরোয়া ভাবে বাস্তব সংখ্যা তন্ত্রের বর্ণনা দেওয়ার চেষ্টা করা হলো| প্রথমে দেখা যাক বাস্তব সংখ্যা তন্ত্র বলতে আমরা কি বুঝি এবং এইসব সংখ্যার মৌলিক ধর্মই বা কি?
সংখ্যার কথা বলতে গেলে প্রথমেই যাদের কথা মাথায় আসে তারা হল স্বাভাবিক সংখ্যা বা ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যা, যাদের আমরা খুব ছোটবেলা থেকেই চিনতে শিখছি| 1,2,3,4,...ইত্যাদি এইসব সংখ্যাগুলিকে কে কবে কোথায় প্রথম ব্যবহার করেছিল তা জানা নেই|যতদূর মনে হয় প্রাচীন সভ্যতার মানুষেরা সভ্যতার বিকাশের কোনো একভাবে তাদের নিজস্ব জাগতিক প্রয়োজনের তাগিদেই গণনা করতে শেখে|হয়তোবা তাদের পালিত পশুর হিসাব রাখতে গিয়ে|তারপর ক্রমে ক্রমে তাদেরই মধ্যে প্রতিভাধর কেউ এই বস্তুগত গণনার ধারণাকে বিমুক্ত রূপ দিয়ে সংখ্যার ধারণা তৈরি করে এবং তার জন্য নির্দিষ্ট চিহ্নের ব্যবহার শুরু করে|আশ্চর্যের বিষয় হল যে পৃথিবীর বিভিন্ন ভূখণ্ডে বিভিন্ন সময়ে গড়ে ওঠা নানান ভূখন্ডে বিভিন্ন সময়ে গড়ে ওঠা নানান প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতায় এইসব চিহ্নের রূপ বিভিন্ন হলেও চিহ্নগুলি যেসব সংখ্যার কথা বলছে তা কিন্তু একই ছিল|
স্বাভাবিক সংখ্যার ক্ষেত্রে যে দুটি মৌলিক প্রক্রিয়া আমাদের জানা আছে তাহলে যোগ এবং গুণ|উভয় ক্ষেত্রেই দুটি স্বাভাবিক সংখ্যা থেকে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফল হিসেবে আমরা কোন স্বাভাবিক সংখ্যা পাই|যে পাঁচটি মূলসূত্র গিয়ে এ প্রক্রিয়া দুটি ধর্মের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যায় সেগুলি হল- a, b, c স্বাভাবিক সংখ্যা হলে
- a + b = b + a
- a b = b a
- ( a +b ) + c = a + ( b + c )
- ( a b ) c =a ( b c )
- a ( b + c ) = a b +a c
ওপরের পাঁচটি সূত্র দিয়ে নিয়ন্ত্রিত স্বাভাবিক সংখ্যার গাণিতিক তথ্যকে পরিভাষায় পাটিগণিত বলে
আমরা নিশ্চয়ই দেখেছি যে শূন্য সংখ্যাটিকে স্বাভাবিক সংখ্যা বলে ধরা হয় না|বস্তুত সংখ্যা তন্ত্রের শূন্যের অনুপ্রবেশ ঘটেছে সভ্যতার অনেক পরবর্তী বিকশিত ধাপে,যখন নিরাকার অনস্তিত্বের ধারণাকে গাণিতিক পরিভাষায় 0 হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এই চিহ্নকে কালক্রমে একটি সংখ্যার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে| খেয়াল করে দেখা যায় এই বিশেষ সংখ্যার ধারণা নিতান্তই তত্ত্বগত এবং কোনভাবেই থেকে সরাসরি বস্তুগত বর্ণনার সাথে ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে না| সম্ভবত এই কারনেই বিভিন্ন প্রাগৈতিহাসিক সংখ্যা তন্ত্রের শূন্যের ব্যবহার পাওয়া যায় না|
সভ্যতার ইতিহাসে যেভাবে স্বাভাবিক সংখ্যার ধারণা ক্রমশ তৈরি হয়েছে তার সাথে একদিন থেকে আমরা আজও প্রথমেই সংখ্যাগুলিকে চিনতে শিখি তার এক অদ্ভুত মিল রয়েছে| মনে করে দেখা যাক ছোটবেলার সেই রঙিন বইগুলোর কথা যেখানে সংখ্যা 1এর পাশে আঁকা থাকতো কোন একটি বস্তুর ছবি সংখ্যার 2 এর পাশে আঁকা থাকতো কোন দুটি বস্তুর ছবি সংখ্যার 3এর পাশে আঁকা থাকত কোন তিনটি বস্তুর ছবি ইত্যাদি| অর্থাৎ স্বাভাবিক সংখ্যা কে আজও আমরা কিন্তু শিখি বস্তুগত গণনার ধারণার সাথে তাল মিলিয়ে| খেয়াল করে দেখলে দেখা যাবে এই স্তরের বইগুলিতে কখনোই শূন্যের কথা সংখ্যা হিসেবে থাকে না কারণ শূন্য সংখ্যাটিকে এভাবে কোন বস্তুর ছবি এঁকে বোঝানো সম্ভব নয়| আরেকটা বড় হবার পর বুদ্ধির আরো পরিমার্জিত স্তরে এসে তবেই আমরা শূন্যের ধারণা কে বুঝতে পারি এবং এটি একটি সংখ্যা হিসেবে মেনে নিই| যোগ এবং কোন প্রক্রিয়ায় 0 যে নিয়ম মেনে চলে তা হল
0+0=0*0=0; যে কোন স্বাভাবিক সংখ্যা a এর জন্য a+0=0; a*0=0
### সভ্যতার ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি শূন্যের ধারণা কে একটি সংখ্যার মর্যাদা পেতে বহু শতাব্দী অপেক্ষা করতে হয়েছিল| গাণিতিকভাবে অমূল্য এই ধারণার প্রথম বিকাশ ঘটে প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতায়|G.B. Halsted এর ভাষায় "...বুদ্ধি ও চেতনার বিকাশ এর থেকে বেশি সুদূরপ্রসারি আবিষ্কার গণিতের ইতিহাসে নেই"###
এরপর আলোচনা করা যায় - পূর্ণসংখ্যার কথা শুনলে অবাক হতে হবে এইসব সংখ্যা যাদের আমরা বিদ্যালয়ের নিচু শ্রেণীর থেকেই কত সহজে ব্যবহার করি সংখ্যা হিসেবে, এদের মেনে নিতে সময় লেগেছিল এক হাজার বছরেরও বেশি| এসে চন্দ্র গর্ব করে বলতে পারি যে একমাত্র প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা ছাড়া আর কোন সভ্যতায় ঋণাত্মক সংখ্যার কথা পাওয়া যায় না| প্রাচীন ভারতে ব্রহ্মগুপ্তের কাজে ঋণাত্মক সংখ্যার পরিষ্কার ধারণা লক্ষ্য করা যায় যেখানে ইউরোপের প্রথম আমরা এই ধরনের সংখ্যার কথা পায় সপ্তদশ শতকের গোড়াই| তবে ধীরে ধীরে অষ্টাদশ শতক থেকে ঋণাত্মক পূর্ণ সংখ্যার গুরুত্ব বা মর্যাদা পেতে শুরু করে|
স্বাভাবিক সংখ্যার গড়ে ওঠার পর প্রাচীনকালে গণিতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ছিল খুব বড় স্বাভাবিক সংখ্যার মান কে চিহ্নের সাহায্যে সুন্দর করে প্রকাশ করা এবং এই সঙ্গে বড় বড় সংখ্যার যোগফল ও গুণফল নির্ণয়ের সুবিধাজনক সূত্রের আবিষ্কার| ইতিহাস ঘাঁটলে সংখ্যা চিহ্ন সাজিয়ে সংখ্যাকে লেখার মূলত তিন ধরনের পদ্ধতির কথা পাওয়া যায়, যথাক্রমে চিনদেশের গণভিত্তিক পদ্ধতি মিশরীয় গ্রিক এবং রোমক সভ্যতার যোগ ভিত্তিক পদ্ধতি এবং প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার অসামান্য স্থান ভিত্তিক পদ্ধতি যা পরে হিন্দু আরবীয় গণনার শৈলী বলে পরিচিত হয়েছে| স্থান ভিত্তিক পদ্ধতির অসাধারণত্ব লুকিয়ে আছে এই পদ্ধতির মূল কথা অর্থাৎ|একটি সংখ্যা চিহ্নের স্থানভিত্তিক মানের ওপর|
স্থান ভিত্তিক মানের ওপর বিশদে পরের part এ আলোচনা করা হয়েছে|
মাধ্যমিক গণিত ও উচ্চ মাধ্যমিক গণিতে এ আলোচনা নিতান্তই primary মনে হলেও, পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা তন্ত্র সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন|
Homework Help from Expert Tutors
Upload your homework questions and get video and PDF solutions created by expert tutors. Delivery within 6- 24 Hrs.